কালচক্র

কালচক্র
-প্রলয় কুমার নাথ

(১)

জঙ্গলের এবড়ো খেবড়ো মাটির ওপর উবু হয়ে বসে ছিলেন বিনোদবাবু। মাথার মধ্যে কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। এক মুহূর্তের মধ্যে যে কি হয়ে গেল, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়ে উঠেছে চারি দিকে। বনের নাম না জানা গাছগুলোর মাথার ওপর, খোলা আকাশের বুকে, নিজের পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে বিকশিত হয়েছে চাঁদ। বাসায় ফিরতি পথে যেতে যেতে, আজকের মত শেষ বারের জন্য কর্কশ স্বরে ডেকে উঠলো কোন এক অচেনা পাখির ঝাঁক। চাঁদের আলোর রুপোলী সাজে যেন সেজে উঠেছে গোটা জঙ্গলের সমস্ত গাছপালা। ভয়ার্ত চোখে চারিদিকে চেয়ে দেখার পর, জঙ্গলের মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালেন বিনোদবাবু। হঠাৎ পুব দিক থেকে ছুটে আসা দমকা ঝড়ো হাওয়ার দাপটে যেন কেঁপে উঠলো তার সর্বশরীর। আতঙ্ক আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে, দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্যের মত তিনি এক পা দুই পা করে এগিয়ে যেতে লাগলেন বন্য গাছপালা মাড়িয়ে!

মস্তিস্কের ওপর জোর খাটিয়ে ভাবতে লাগলেন তিনি…… এখন কোথায় আছেন তিনি? কি করে পৌঁছলেন তিনি এখানে? কোথায়ই বা চলেছেন তিনি এখন? নাহ, ঝাপসা হয়ে আসা অন্ধকারের মাঝে ঝড়ো হাওয়ায় চারিপাশের গাছপালাগুলোর দুলে ওঠা ছাড়া আর কোন দৃশ্যই তো ভেসে উঠছে না তার চোখের সামনে! তার মানে কি আগেকার সমস্ত স্মৃতি লোপ পেয়েছে তার মস্তিস্ক থেকে? ঠিক সেই মুহূর্তেই কোন এক হিংস্র বন্য পশুর ক্ষুধার্ত গর্জনে যেন কেঁপে উঠলো আঁধারে ঘেরা জঙ্গলের চতুর্দিক! আর একটুও সময় নষ্ট না করে, কোনদিকে না তাকিয়ে, দ্রুত পায়ে সামনের দিকে ছুটতে লাগলেন বিনোদবাবু! বেশ কিছুক্ষণ ছুটতে ছুটতে গলদঘর্ম হয়ে উঠলেন তিনি, তার হৃদকম্পন আর নিঃশ্বাসের গতিবেগ দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে উঠলো! হঠাৎ কোন বন্য লতার ঝোপে পা আটকে গিয়ে, মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলেন তিনি…… তীব্র যন্ত্রণা যেন দলা পাকিয়ে উঠতে লাগলো তার সমস্ত শরীর জুড়ে। সেই অবস্থাতেই তার দৃষ্টি আটকে গেল, তারই সামনে, অনতিদূরে ঘটতে থাকা একটি ভয়াবহ দৃশ্যের দিকে!

সেই রাতের অন্ধকারের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তার সামনের একটি সুবৃহৎ গাছের সমগ্র ডালপালা জুড়ে জ্বলে উঠেছে হলুদ অগ্নিশিখা! তার মানে দাবানল…… দাবানল লেগেছে এই বনে! মাটি থেকে আবার উঠে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলেন বিনোদবাবু। তিনি জানেন, যে এমন দাবানল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানের বন জঙ্গলকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে! তার মানে কি তার জীবনের অন্তিম সময় এখন উপস্থিত? এই লেখা ছিল তার অদৃষ্টে! ঠিক এমন সময়, যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারলেন না বিনোদ বাবু! তিনি স্পষ্ট শুনতে পারছেন একজন পুরুষের গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর, “বাঁচাও…… কে আছো, বাঁচাও আমায়…… বাঁচাও……” তার মানে কি এই জনমানবশূন্য গহীন বনে তার মত আরেকজন কোন মানুষ আছে? আরেকবার…… আরেকবার তিনি শুনতে পেলেন সেই অচেনা কণ্ঠস্বর, “বাঁচাও…… এই আগুনের তাপ থেকে রক্ষা করো আমায়…… আমি যে নড়তে পারছি না এই স্থান থেকে…… বাঁচাও……” ব্যাস, আর কোন সময় নষ্ট না করে সেই জ্বলন্ত গাছটির দিকে এক ছুটে এগিয়ে গেলেন বিনোদবাবু। আগুনের তাপে ভস্মীভূত হয়ে, জ্বলন্ত ডাল পালা খসে পড়তে শুরু করেছে গাছের নিচে। সেই গাছের নিচেই যেন কেউ একটা পড়ে আছে, সেই করে চলেছে নিজেকে আগুনের তাপ থেকে বাঁচানোর এই আকুল আর্তনাদ।

বিনোদবাবু আরো দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন সেই দিকে। কিন্তু গাছটির নিচে আসতেই, তার নিচে পড়ে থাকা প্রাণীটাকে দেখে বিস্ময় আর আতঙ্কে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। নাহ, এটাতো কোন মানুষ নয়! এটা তো…… এটা তো…… আর ভাবতে পারলেন না তিনি! ঠিক সেই সময় আবার তার কানে ভেসে এলো আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য সেই জীবটার কাতর আর্তনাদ! কি করবেন কিছুই বুঝে না উঠতে পেরে, বিনোদ বাবু এগিয়ে যেতে লাগলেন জ্বলন্ত গাছের নিচে অচল হয়ে পড়ে থাকা সেই প্রাণীটার দিকে!

(২)

পরপর পাঁচ বার মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে বাথরুমের আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে চেয়ে রইল বলবন্ত। বলবন্ত ওরফে বলবন্ত সিংহ, কলকাতার একটি বিখ্যাত রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে সায়েন্টিস্ট পদে যোগ দেওয়া তরতাজা নবযুবক। সে জানে, যে এতক্ষন ধরে যে অস্থিরতার চোটে তার প্রায় উন্মাদের মত অবস্থা হচ্ছিল, সেটা তার অনেক দিনের সমস্যা। সেই যখন ক্লাস নাইনে পড়ে সে, তখন থেকেই সে প্রতি মাসে এক দুই বার ভোগ করে আসছে এই নরক যন্ত্রনা। বেসিনের ওপরে রাখা কাঁচের পাত্রের ভেতর ঘন তরল পদার্থটির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল সে। এটার জন্যই তাকে প্রতিবার এই সাময়িক অস্থিরতার শিকার হতে হয়!

জীবনের যে সময়ে নারী জাতির প্রতি প্রথম আকর্ষণ উপলব্ধি করে কোন তরুণ, সেই সময় থেকেই এই অদ্ভুত শারীরিক ঘটনার শিকার হয়ে চলেছে বলবন্ত। প্রথম প্রথম সে বুঝতে পারতো না এর কারণ। বাড়ির কাউকেই সে এখনো বলেনি এই কথা, কিন্তু গোপনে খোঁজ নিয়ে সে এখন জানে তার কারণ। সে জানে যে এই অদ্ভুত শারীরিক ক্ষমতাটা তার জন্মগত সূত্রেই পাওয়া, তাই হয়তো সারা জীবন তাকে সহ্য করে চলতে হবে এই অস্থিরতার দাপট! কাঁচের পাত্রের তরল পদার্থটিকে বেসিনের মধ্যে ফেলে দিয়ে, পাত্রটিকে ভালো করে ধুয়ে নিলো বলবন্ত। কে জানে, আবার কখন কাজে লাগবে সেটা। এখন তার শারীরিক অবস্থা অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে। সে তোয়ালেতে মুখ মুছে নিয়ে নিজের বেডরুমে চলে এলো।

এমন সময় সশব্দে বেজে উঠলো বিছানার ওপর পড়ে থাকা তার মোবাইল ফোনটা। নিজের কথা ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা তুলে তার স্ক্রিনের দিকে তাকালো। তারপর ফোনটা রিসিভ করে, কিছুক্ষণ আগেকার সেই ঘটনার কথা ভুলে গিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি এনে, ভাঙা ভাঙা হিন্দি আর বাংলা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো,
– হা ম্যাডামজি, বোলিয়ে কেয়া হাল চাল হে……
ফোনের ওপার থেকে শ্রাবন্তী এক মুখ হেসে বলে উঠলো,
– বস ভগবান কি কৃপা সে সব কুছ ঠিক ঠাক হে……কিন্তু শুধু আপনার খোঁজ খবর নেবার জন্যই ফোন করিনি আমি, অন্য একটা বায়নাও আছে আপনার কাছে আমার!

বলবন্ত আর শ্রাবন্তী একই রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বলবন্ত প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগে, এবং শ্রাবন্তী সাইকোলজি বিভাগে। সেই সূত্রেই দুজনের আলাপ। শ্রাবন্তীর কথায় বলবন্ত আশ্চর্য হয়ে কিছু একটা বলতে চলেছিল, কিন্তু তার আগেই শ্রাবন্তী বলে উঠল,
– আরে মশাই, আপনি তো আর এবার পুজোর ছুটিতে রাজস্থানে ফিরছেন না, তাই আসুন না, এই কয়েকটা দিন আপনি আমাদের সাথে কাটান!
বলবন্ত রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে সে কলকাতায় থাকতে বাধ্য হয়েছে। প্রতি বছর পুজোর ছুটির সময় আরো বেশ কিছুদিনের ছুটি নিয়ে সে রাজস্থানে চলে যায়। তবে এবার কাজের চাপের জন্য, পুজোর কয়েকটা ছুটির দিন বাদ দিয়ে, অন্য কোন দিন সে আর ছুটি নিতে পারবে না। তাই এবার পুজোটা তাকে কলকাতাতেই কাটাতে হবে।

বলবন্ত বলে উঠলো,
– আপ লোগো কি সাথ মতলব?
শ্রাবন্তী হেসে বলে উঠলো,
– আমি আর আমার হাজব্যান্ড এবার বর্ধমানের চন্দ্রপুরে অবস্থিত আমার মামার বাড়িতে পুজোর ক’টা দিন কাটাবো ভেবেছি। তার থেকেও বড় কথা কি জানেন, আমার মামার বাড়িতে দশ বছর ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুর্গা পুজো আবার শুরু করতে চলেছি আমরা……আপনি আসুন না আমাদের সাথে, খুব ভালো লাগবে আপনার!
এবার মনটা বেশ প্রসন্ন হয়ে উঠলো বলবন্তের, সে হেসে বলে উঠলো,
– বিলকুল, বিলকুল হাম জায়েঙ্গে আপকে সাথ! লেকিন এক সাওয়াল উঠ রাহা হে মন মে……আপ কি মামাজি কি ঘর মে দুর্গা পূজা দশ সালো সে বন্ধ কিউ থা?

এই কথা শুনে যেন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেল শ্রাবন্তীর কন্ঠ। যেন এক মুহূর্তের মধ্যে একটি গম্ভীর চিন্তার রেশ ছড়িয়ে গেল তার মস্তিষ্কের মধ্যে। কিন্তু পরমুহূর্তেই সে হেসে বলে উঠলো,
– সে অনেক কথা, মিস্টার সিংহ……আপনি আসুন না আমাদের সাথে, সব কিছুই পরে বলা যাবে আপনাকে। তাহলে অপনি কনফার্ম আসছেন তো?
বলবন্ত বলে উঠলো,
– জি হা, জরুর!

(৩)

পুজো এখনো এলই না, এদিকে চন্দ্রপুরে মনে হচ্ছে শীত কাল পড়ে গিয়েছে। এর সাথে শুরু হয়েছে ঝির ঝিরে বৃষ্টি। তাই এখানকার চাটুজ্যে বাড়ির কেয়ার-টেকার রমাপদর মনটা আজ বেশ খারাপ। কোনো মানে হয়, পুজোর আগে এমন বৃষ্টির! গোটা পুজোটাই মনে হয় মাটি হয়ে যাবে এবার। সুবিশাল চাটুজ্যে বাড়িতে এখন সেই একমাত্র মানুষ। এই বাড়ির নিচের একটি ঘরে, ছোট্ট দড়ির খাটিয়াটার ওপর কোন মতে গুটি সুটি মেরে শুয়ে ছিলো সে। ঠান্ডা লাগায়, এই শরৎ কালেও গায়ের উপর হালকা একটা কাঁথা চড়িয়ে রেখেছে এই বছর পঞ্চাশের মানুষটি। রাত বোধহয় সাড়ে দশটা হবে, তবুও ঘুম আসছিলো না তার চোখে।

তার ঘরের এক পাশে খোলা জানলা দিয়ে চাঁদের আলো প্রবেশ করেছে গোটা ঘরে। তবে আকাশে চাঁদ থাকলেও বৃষ্টির কিন্তু বিরাম নেই। এই বাড়িটা পুরোনো আমলের বনেদি ধাঁচে গড়া, তাই এই গ্রামের লোকালয় থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থিত। রমাপদ এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল জানলার বাইরে, বাড়ির বাগানে অবস্থিত একটি বিশাল বড় পলাশ গাছের দিকে। কানে একটানা বৃষ্টির শব্দ আসছে, এছাড়াও ঝিঁঝিঁ পোকা আর পাশের পুকুর থেকে আসছে ব্যাঙের ডাকের আওয়াজ। এই বৃষ্টি স্নাত রাতের শীতল রুপোলি আমেজ উপলব্ধি করতে করতে অতীতের অনেক কথা মনে পড়ে গেল রমাপদর।

চাটুজ্যে বাবুরা ছিলেন এই গ্রামের সবচেয়ে গণ্যমান্য পরিবার। সেই ইংরেজদের সময় থেকে গ্রামের তিন তিনটে রাইস মিলের মালিক ছিলেন তারা। তাই গ্রামবাসীরা এই পরিবারকে গ্রামের জমিদারের আসনেই বসিয়েছিলো। রমাপদরা বংশপরাক্রমে এই বাড়িতে কাজ করে এসেছে। তাই এই বাড়ির নাড়ি নক্ষত্র তার চেনা। আগে প্রতিবছর কত ধুমধাম করে দুর্গা পুজো করা হত এই বাড়ির ঠাকুর দালানে। বাবুরা দুই হাতে পয়সা খরচ করতেন, পুজোর চার দিনই গ্রামের সমস্ত গরিব দুঃখী মানুষজনের মধ্যে বিলি করা হত অন্ন এবং পোশাক। তারপর কালের নিয়মে হারিয়ে গেল সেই সব দিন। মিটি মিটি জ্বলা প্রদীপের একমাত্র সলতের মত শুধু রয়ে গেলেন এই পরিবারের একমাত্র বংশধর, তার ছোটবাবু, শ্রী বিনোদবিহারী চাটুজ্যে!

রমাপদ জানে যে সদা হাস্যময় বিনোদবাবু ছিলেন পন্ডিত ব্যক্তি। কলকাতার কলেজ থেকে কত পড়াশোনা করে এত্ত বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। সেই সব নাম রমাপদর মত মুখ্যু-সুখ্যু মানুষ মুখে আনতেও পারবে না। কোন একটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন বিনোদ বাবু, সেটাও জানে না সে। তবে সে এই কাজ পাগল মানুষটাকে বার বার বিয়ে করার কথা মনে করিয়ে দিলেও, তিনি সেই কথা কানেও তুলতেন না। তবে একটা যা পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছিলেন বিনোদবাবু, আগেকার মত অত ধুমধাম না হলেও, প্রতি বছর দুর্গা পুজোটাকে সুষ্ঠ ভাবেই সম্পন্ন করতেন তিনি।

কিন্তু তার পরে যে কি থেকে কি হয়ে গেল, তা ঈশ্বরই জানেন! হিমাচল প্রদেশের কোথায় যেন একটা গবেষণার কাজ নিয়ে গেলেন তার ছোটবাবু, কিন্তু সেই যাওয়াই হল অগস্ত্যযাত্রা! আর ফিরে এলেন না বিনোদ বাবু! কত থানা পুলিশ করলো রমাপদ এবং গাঁয়ের লোকেরা, কিন্তু কিছুতেই তার হদিস পাওয়া গেল না। এটা প্রায় আজ থেকে দশ বছর আগেকার কথা, তাই দশ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এই বাড়ির দুর্গা পুজো। কিন্তু এই বছর আবার শূন্য ঠাকুর দালান থেকে শোনা যেতে চলেছে ঢাকের বাদ্যি, কারণ এই বছর তার ছোটবাবুর একমাত্র ভাগ্নী, শ্রাবন্তী দিদিমণি এবং তার স্বামী অমলেন্দু দাদাবাবু আবার শুরু করতে চলেছেন দশ বছর ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই বাড়ির পুজো! কাল দুপুরের মধ্যেই এসে পড়বেন তারা, তাদের ঘর দোর আগে থেকেই পরিষ্কার করে রেখেছে রমাপদ। তার মনে যেন আর আনন্দ ধরে না!

এমন সময় হঠাৎ তার চোখ চলে গেল জানলার বাইরে ওই পলাশ গাছটার পেছনের ঝোঁপের ভেতর! তার যেন স্পষ্ট মনে হলো রাতের আবছা আলো আবছা অন্ধকারের মধ্যে একটি খর্বাকার চারপেয়ে জীবের ছায়ামূর্তি এদিক থেকে ওদিকে সরে গেল! বৃষ্টির শব্দের মাঝেও স্পষ্ট শোনা গেল জলে ভেজা ঝরা পাতার ওপর তার খস খস পদশব্দ! বেশ অবাক হয়ে বিছানা থেকে উঠে জানলার দিকে ছুটে গেল রমাপদ! নাহ, এটা তো তার চোখের ভুল নয়, এখনো হালকা হালকা দুলে উঠছে গাছের পেছনে ওই ঝোপটা! তার মানে কি শেয়াল ঢুকেছে বাড়ির ভেতরে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রমাপদ ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সেই ঝোপের দিকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে অনেক খোঁজার পরও কিছুই পেলো না সে। অগত্যা আবার ফিরে এলো সে তার নিজের ঘরে।

ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে, পেছন ফিরতেই আতঙ্কের চোটে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহ হতে লাগলো তার সর্বশরীর দিয়ে। খোলা জানলা দিয়ে আসা চাঁদের আলো এসে পড়েছে তার বিছানায়……আর সেই আলোতেই সে দেখতে পেল যে বিছানার এক প্রান্তে বসে আছে সেই প্রাণীটা……নাহ, এটা কোনো প্রাণী নয়….এটা কি? এটা কি কোন প্রেত মূর্তি? এবার বিছানার ওপর মানুষের মত দুই পায়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সেই অবয়বটি, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো রমাপদর কাছে! একটা চাপা গর্জন আসছে তার কানে!…..কম্পিত শরীরে দেওয়ালের গায়ে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে রইল রমাপদ! সে নিজেও বুঝতে পারলো না, যে কখন জ্ঞান হারিয়ে ঘরের মেঝের ওপর ঢলে পড়লো সে!

(৪)

যখন চোখ মেলে তাকালো রমাপদ, তখন সে নিজের বিছানায় শুয়ে। আর সেই বিছানার চার পাশে উদ্বিগ্ন চিত্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে শ্রাবন্তী, অমলেন্দু, বলবন্ত এবং এই গ্রামের বেশ কিছু মানুষ। কলকাতা থেকে এখানে আসতে আসতেই শ্রাবন্তীর মুখে বলবন্ত শুনেছে এখানে দশ বছর ধরে দুর্গা পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ। তবে রমাপদর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারণ তাদের কাছে এখনো অজানা!

একটু সুস্থ হয়ে উঠতেই রমাপদ ভয়ার্ত গলায় নিজের দুই চোখ বিস্ফারিত করে, শ্রাবন্তীর দুই হাত ধরে ঝাঁকিয়ে চিৎকার করে উঠলো,
– পিশাচ, দিদিমণি, পিশাচ……কোন অপদেবতার ছায়া পড়েছে এই গ্রামে!
ব্যাস এটুকু বলেই ভয়ের চোটে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো সে। শ্রাবন্তী তাকে শান্ত করে, দৃঢ় স্বরে বলে উঠলো,
– না, রমাদা, সেটা কোন পিশাচ নয়…..কারণ যদি সেটা তেমন কিছু হত, তাহলে সে কি তোমাকে আস্ত ছেড়ে দিতো?
এই কথা শুনে কান্না থামিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল রমাপদ। তারপর অস্ফুট কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,
– কিন্ত আমি যে নিজের চোখে দেখেছি দিদিমণি……নিজের চোখকে কিভাবে অবিশ্বাস করবো বলুন! বেঁটে মত চারপেয়ে জীবটি, লাল টকটকে জ্বলন্ত দুই চোখের মণি, কালচে গায়ের রং, আমাকে দেখে দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো এখানে…..এই এখানে!
এই বলে রমাপদ উন্মাদের মত বিছানার সেই প্রান্তের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে লাগলো যেখানে সে প্রাণীটিকে দাঁড়াতে দেখেছিলো।

সেখানে উপস্থিত সকলের শিরদাঁড়া দিয়ে যেন একটি বরফগলা ভয়ের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো। এমন সময় অমলেন্দু বলে উঠলো,
– কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে এটা ওর চোখের ভুল, কি দেখতে কি দেখেছে সে……
কিন্তু সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতে রমাপদ কিছু বলে ওঠার আগেই, কাঁপা কাঁপা গলায় চিৎকার করে উঠলো সেখানে উপস্থিত এই গ্রামেরই এক বয়স্ক ব্যক্তি,
– না বাবু, না…….ও ভুল বলছে না বাবু, ও ঠিক কথা বলছে! এই গ্রামের ওপর কোনো অশুভ শক্তির ছায়া পড়েছে বাবু!…..কারণ…..কারণ…..
আশ্চর্য হয়ে অমলেন্দু বলে উঠলো,
-কারণ কি? বলো, চুপ করে গেলে কেন?
লোকটি এবার রমাপদর মতই বিস্ফারিত চোখে বলে উঠলো,
– কারণ ও যাকে দেখেছে, কিছুদিন আগে সেই একই চেহারার একটি প্রাণীকে আমার মেয়েও দেখেছে, বাবু…..সেদিন রাতে আমার মেয়ে পুকুর পারে বাসন মাজতে গিয়েছিল, সেই সময় আর কেউ ছিল না সেখানে। একটু দূরে ঝোপের মধ্যে কারোর পায়ের আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে সে বাসন ছেড়ে ওখান থেকে বাড়ির দিকে ছুটে আসতে চায়, কিন্তু তখনই ঝোপ থেকে বেরিয়ে তার পথ আগলে ধরে ওই প্রাণীটা !….. মেয়ে ভয় পেয়ে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়! অনেক রাতেও সে বাড়ি ফিরছে না দেখে, আমি লোকজন নিয়ে পুকুর পারে গিয়ে……

অমলেন্দু বোধহয় আবার কিছু একটা বলতে চলছিলো এই কথার বিপক্ষে, কিন্তু তাকে থামিয়ে শ্রাবন্তী বলে উঠলো,
– না অমলেন্দু, আমার মনে হয় না এরা দুজনেই চোখে ভুল দেখেছে! কিছু একটা তো অবশ্যই আছে এই গ্রামে, আর এই কথাও মানতে হয়, যে প্রাণীটি কিন্তু কোন ক্ষতি করেনি রমাদা বা ওই মেয়েটিকে! তাহলে এটা কি ধরণের প্রাণী? আর এভাবে মানুষকে ভয় দেখানোর পেছনে তার উদ্দেশ্যই বা কি?
সেখানে উপস্থিত সকলেই আতঙ্কিত মুখে স্তব্ধ হয়ে রইল শ্রাবন্তীর এই প্রশ্ন শুনে!

(৫)

চন্দ্রপুর গ্রামে এসে সব চেয়ে বেশি ভ্যাবাচ্যাকা খেতে হয়েছে বলবন্তকে। নিজের সেই অদ্ভুত শারীরিক পরিস্থিতির কথা না হয় সে বাদই দিলো, কিন্তু এখানকার পরিবেশও যথেষ্ট রহস্যময়। সে রাজস্থানের বাসিন্দা হওয়ায় রাজপুত রাজাদের প্রাসাদ অনেক দেখেছে, কিন্তু এই চাটুজ্যে বাড়ির মত এত বড় বাঙালী ধাঁচে গড়া পাঁচ মহলা বাড়ি খুব কমই দেখেছে। রাজপুত রাজা মহারাজাদের যুদ্ধ বিদ্রোহ বা জীবনযাত্রা নিয়ে অলৌকিক গল্পও অনেক শুনেছে সে, কিন্তু এই পরিবারের মত রহস্যময় পরিস্থিতির কথা বোধহয় আর অন্য কোথাও শোনেনি। দশ বছর ধরে একটা মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেল, কেউ তার হদিস পেলো না, তিনি বেঁচে আছেন কি মারা গিয়েছেন এই কথাও কেউ জানে না! তারপর ওই রহস্যময় প্রাণীটির কথা তো আছেই!

এই পরিবারের পুরোনো কুমোর মহা আনন্দে দুর্গা প্রতিমার মাটির শরীরের ওপর রং লাগাতে শুরু করেছে। একে একে ফুটিয়ে তুলছে প্রতিমার চোখ, নাক, ঠোঁট, ভ্রু…….শ্রাবন্তী, অমলেন্দু আর বলবন্ত বাড়ির ঠাকুর দালানে দাঁড়িয়ে সেদিকেই মুগ্ধ নয়নে চেয়ে ছিল। এমন সময় নীরবতা ভঙ্গ করলো বলবন্ত, সে শ্রাবন্তীকে জিজ্ঞাসা করলো,
– আপকি মামাজি কিস বিষয় কো লেকে রিসার্চ কর রহে থে, ইয়ে পতা হে আপকো?
শ্রাবন্তী পূর্বেকার স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
– উনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, সম্ভবত তেমন কোন বিষয় নিয়েই গবেষণা করছিলেন হয়তো। আসলে শেষ বারের মত ওনাকে এই বাড়িতে যখন দেখেছিলাম, তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ছুটি কাটাতে এসেছিলাম এখানে…..মানুষটা বড্ড ভালো ছিলেন, জানেন। যেমন রাজপুত্রের মত চেহারা, তেমনই ভালো একাডেমিক রেকর্ড! শুধু কি তাই, হিন্দু শাস্ত্র যেমন পুরাণ, রামায়ণ এবং মহাভারত, এই সবেও তার বেশ ভালো জ্ঞান ছিলো…..মাঝে মধ্যেই এই মহাকাব্যগুলির কত অজানা ঘটনা সকলকে বলে চমকে দিতেন তিনি!

অমলেন্দু জিজ্ঞাসা করলো,
– দশ বছর আগে তিনি যে হিমাচল প্রদেশে যাচ্ছেন কোন রিসার্চের কাজ করতে, এই কথা কি ভাবে জানলে তোমরা? আর যদি জেনেও থাকো, তাহলে ওনার নিখোঁজ হওয়ার পর সেই স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে কি জানতে পেরেছিলে?
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে শ্রাবন্তী বলে উঠলো,

– যতটা মায়ের মুখে শুনেছি, তিনি তার কাজ কর্ম নিয়ে কখনই বাড়ির কাউকে তেমন কিছু বলতেন না। তবে শেষ বারের মত বাড়ি থেকে বেরোবার আগে, নিজেই নাকি বলে গিয়েছিলেন হিমাচল প্রদেশে যাওয়ার কথা। তারপর তার নিখোঁজ হওয়ার পর, সেখানেও অনেক খোঁজ খবর নেওয়া হয়, শুধু জানা যায় যে সেখানকার চাম্বা জেলার কোন একটা গ্রামে নাকি তাকে শেষ বারের মত দেখা গিয়েছে! শুধু সেখানেও নয়, কলকাতার যে রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন, সেখানেও অনেক খোঁজ খবর নেয় পুলিশ। সেখানকার কর্তৃপক্ষ নাকি স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যে অফিসিয়ালি তিনি এমন কোন বিষয়ে রিসার্চ করছিলেন না, যাতে তার হিমাচল প্রদেশে যাওয়ার দরকার হয়! ফলে বোঝাই যাচ্ছে, যে তিনি সেখানকার কাজ বাদেও এমন অন্য কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন, যা তিনি কাউকে জানাতে চাননি! এই বিষয়ে তার গবেষণার কাগজ পত্র থেকেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ!

ওরা সকলেই আবার ম্লান মুখে তাকিয়ে রইল দুর্গা প্রতিমার দিকে। সেদিকেই তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো শ্রাবন্তী,
– আমায় শক্তি দাও, মা, যাতে এই সকল রহস্যের সমাধান আমি তোমার বোধনের আগেই করে ফেলতে পারি।
ওর মনে হল, যেন কেমন জ্বলজ্বল করে উঠলো দুর্গা প্রতিমার সদ্য আঁকা ত্রিনয়ন!

(৬)

সেদিন রাত্রে বিছানায় শুয়ে ঘুম আসছিলো না শ্রাবন্তীর। তার পাশে শুয়ে অমলেন্দু নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। শ্রাবন্তীর মনে বিশ্বাস আছে যে বিনোদ বাবু এখনো বেঁচে আছেন! একটা রক্ত মাংসের মানুষ কিভাবে সকলের চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে? তাছাড়া আরেকটা সম্ভাবনাও তার মন থেকে যেতে চাইছিলো না। হোক না হোক এই অদ্ভুত জীবটার নিশ্চয় কোনো সম্পর্ক আছে বিনোদবাবুর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সাথে! কিন্তু এর আগমন তো ঘটলো তার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দশ বছর পর! এর আগে তো এই জীবটাকে কখনো কেউ দেখেনি এই গ্রামে! তাহলে? আর জীবটারই বা আসল পরিচয় কি? সেটা কি কোন ভিন গ্রহের প্রাণী! পলকের মধ্যে শ্রাবন্তীর মনে পড়ে গেল, যে পদার্থবিদ্যার একটি শাখা হল Astrophysics, যাতে বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুগুলির নানা বৈশিষ্ঠ নিয়ে পড়াশোনা করা হয়! তার মানে কি বিনোদ বাবু এই বিষয়ের ওপরই গোপনে গবেষণা করছিলেন? তার আহ্বানেই কি অন্য কোন জগৎ থেকে এসেছে এই প্রাণী? এখানে আসার পেছনে কি উদ্দেশ্য তার? আর এই গবেষণার সাথে বিনোদ বাবুর হিমাচল প্রদেশে যাওয়ারই বা কি সম্পর্ক আছে?

এতগুলো প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে মাথাটা ঝিমঝিম করেছিলো শ্রাবন্তীর। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছিলো সে ক্রমাগত। রাতের অন্ধকারে নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে গোটা গ্রাম। আজ রাতে অবশ্য বৃষ্টি পড়ছে না। তবে বিছানার পাশে খোলা জানলা দিয়ে চাঁদের আলোয় সাথে আসছে ঠান্ডা ঝড়ো হাওয়া। ঘুম না আসায় শ্রাবন্তী বিছানা থেকে উঠে দোতলার ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। এখান থেকে এই বাড়ির চারিপাশের বাগানটা খুব স্পষ্ট ভাবে চোখে পড়ে। চাঁদের রুপোলি আলোয় মনে হচ্ছে এ যেন এক অন্য জগৎ। এখানে দাঁড়িয়ে শ্রাবন্তী তার মামার ব্যাপারেই ভেবে চলেছিলো, হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে ধক করে উঠলো তার বুক! এই রাতের আলো আঁধারীতেও স্পষ্ট দেখেছে সে, যে একটি ছোট বাচ্চার আকৃতির খর্বাকার ছায়ামূর্তি যেন এক ঝাঁপে বাইরে থেকে একতলার পুবের ঘরের একটি খোলা জানলার ভেতরে ঢুকে গেল! মুহূর্তের মধ্যেই শ্রাবন্তীর মনে পড়ে গেল, যে এটা তো বহুদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা তার মামার ঘর!

সাহসে বুক বেঁধে ধীরে ধীরে বারান্দা থেকে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হতে লাগলো শ্রাবন্তী! তার মানে সেই জীবটা বিনোদ বাবুর ঘরে প্রবেশ করেছে! এই সময় বোধহয় লোড শেডিং চলছে, বাড়ির আলোর সুইচগুলো টেপা সত্ত্বেও কোনো আলোই জ্বলে উঠলো না। সেই অন্ধকারের মধ্যেই দুরু দুরু বুকে এক পা এক পা করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে তার মামার ঘরের দিকে যেতে লাগলো শ্রাবন্তী। নাহ, ভয় পেলে চলবে না তার, এই সুযোগেই করতে হবে এই প্রাণীটার রহস্যভেদ!

বিনোদবাবুর ঘরের বাইরে থেকে বন্ধ দরজাটার সামনে এসে পৌঁছতেই আর একটুও সময় নষ্ট করলো না শ্রাবন্তী। সে নিমেষের মধ্যে সেই দরজা খুলে, এক ঝটকায় সশব্দে প্রবেশ করলো সেই ঘরের ভেতর! আতঙ্কিত দৃষ্টি দিয়ে সে চেয়ে রইল দশ বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকা সেই অন্ধকার ঘরের চারিধারে। সব কিছু আগের মতই আছে যেমনটি সে দেখেছিলো, যখন সে এই ঘরে বসেই তার মামার মুখে রামায়ণ মহাভারতের গল্প শুনতে শুনতে বিস্মিত হত হিন্দু শাস্ত্রে বিনোদবাবুর জ্ঞান দেখে! শুধু প্রতিটা আসবাবপত্রের ওপর জমেছে মোটা ধুলোর আস্তরণ। কই সেই প্রাণীটাকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না! তার মানে কি সে লুকিয়ে আছে এখন? অকস্মাৎ সুযোগ বুঝে আক্রমণ করবে বলে? ভয়ে নিঃশ্বাসের গতিবেগ আরো দ্রুত হয়ে এলো শ্রাবন্তীর।

ঠিক এমন সময় তার চোখ চলে গেল ধুলো আর মাকড়সার ঝুলে ভর্তি বিনোদবাবুর পড়াশোনা করার টেবিলটার ওপর। সেখানে খোলা অবস্থায় পড়ে আছে একটি ডায়েরি। তার ওপরেই রাখা রয়েছে একটি পেন। তার মানে কিছুক্ষণ আগেই কেউ কিছু একটা লিখে রেখেছে ওই ডায়েরির পাতায়। শ্রাবন্তী ছুটে গিয়ে টেবিল থেকে তুলে নিলো ডায়েরিটা, তার পর যতটা চাঁদের আলো পাওয়া যায়, তাতেই চেষ্টা করে পড়তে লাগলো কি লেখা আছে তার পাতায়। সেখানে লেখা আছে:

“আমাকে দেখে ভয় পাসনি, শাবু। আমিই যে তোর হতভাগ্য মামা, শ্রী বিনোদবিহারী চাটুজ্যে! “কালচক্র”-এর অভিশাপে আটকে পড়ে আজ আমার এই অবস্থা! এই কথাই গ্রামের সকলকে বলতে চেয়েছি আমি, কিন্তু সকলেই আমাকে দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে! ভালো করে দেখ আমাকে, মহাভারতের এমনই একটি চরিত্রের গল্প তোকে আমি অনেক বার শুনিয়েছি। বল দেখি, আজ আমি যে জীবে রূপান্তরিত হয়েছি, তার নাম কি?”

ঠিক সেই সময় শ্রাবন্তী লক্ষ্য করলো, যে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে এই ঘরের সদর দরজার পর্দা। আর ঠিক তার পেছন থেকে ক্রমে প্রকাশিত হচ্ছে সেই খর্বাকার জীবটার দেহ। তার মানে শ্রাবন্তীর দরজা খোলার ঠিক আগে প্রাণীটা ডায়েরির পাতায় লেখা শেষ করে দরজার এক পাশে এসে লুকিয়ে পড়েছিলো। তারপর সে এই ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই জীবটি দরজার বাইরে গিয়ে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে যায়। সাহসে বুক বেঁধে শ্রাবন্তী আপাদমস্তক দেখতে লাগলো জীবটাকে, তারপর কম্পিত গলায় অস্ফুট স্বরে সে বলে উঠলো,
– বা…..বা…..”বাহুক”!

(৭)

এই অদ্ভুত জীবটাকে চারিদিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলো শ্রাবন্তী, অমলেন্দু, বলবন্ত এবং রমাপদ। অবিকল বিনোদবাবুর গলায় বলে উঠলো এই “বাহুক” নামক প্রাণীটি,
– জানি তোমাদের সকলের মনে আজ অনেক প্রশ্নের ঝড়। তোমাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য, আমাদের প্রথমে যেতে হবে ঋষি দত্তত্রেয় দ্বারা পরশুরামকে বর্ণিত “ত্রিপুরা রহস্য” নামক এক সুপ্রাচীন গ্রন্থে উল্লিখিত একটি ঘটনার কথা। বঙ্গের এক রাজা, সুসেনের ভাই মহাসেনকে তঙ্গন ঋষির ছেলে খোঁজ দিয়েছিলেন এমন এক পাহাড়ের, যার ভেতরে গেলে পাওয়া যাবে এক সম্পূর্ণ অন্য জগতের ঠিকানা। “গন্ডশৈল” নামক সেই পাহাড়ের গুহায় ঢুকে তাদের সত্তা পৌঁছে গিয়েছিল পৃথিবী থেকে বহুদূরে অবস্থিত সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহে। তারপর সেই পাহাড়ের বাইরে এসে তারা জানতে পারে, যে পাহাড়ের মধ্যে শুধু মাত্র একদিন কাটালেও, এই একই সময়ের মধ্যে বাইরের পৃথিবীতে অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে কিছু লক্ষ বছর!

আচমকা চিৎকার করে উঠলো শ্রাবন্তী,
– Einstein এর Theory of Relativity……Time Dilation…..এই বিষয়গুলো নিয়েই তুমি গবেষণা করছিলে, তাই না মামা?
সেই প্রাণীটার গলা থেকে আবার শোনা বিনোদবাবুর কণ্ঠস্বর,

– ঠিক বলেছিস, শাবু! Einstein বলেছেন যে সময়ের গতিবেগ ভিন্ন মধ্যাকর্ষণ শক্তি বিশিষ্ট বিভিন্ন জগৎগুলোর জন্য আলাদা। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে যে জগতের মধ্যাকর্ষণ শক্তি কম হবে, সেখানকার সময়ের গতিবেগ পৃথিবী থেকে বেশি হবে, এবং তদ্বিপরীত! এছাড়াও কোনো গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রেও সময়ের গতিবেগ কোন স্থির বস্তুর থেকে কম হবে! একেই বলে Time Dilation.

একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো সেই প্রাণীটা,
– Einstein এই কথাও বলেছেন, যে একটি জগৎ থেকে অন্য কোন জগতে যাওয়ার সংক্ষিপ্ত রাস্তাকে বলা হয় Wormhole. আমার মনে হয়, যে এই “গন্ডশৈল” পাহাড়টি হল এমনই একটি Wormhole! “ত্রিপুরা রহস্য” বইটি থেকে জানতে পারলাম যে, এই পাহাড়টি অবস্থিত পুরাকালের ইরাবতী নদীর তীরে, যে নদীকে এখন বলা হয় রবি। এই নদীর উৎস হল হিমালয় পর্বত থেকে, যা অবস্থিত হিমাচল প্রদেশের কাংড়়া জেলার মুলতানে। বেশ কয়েক মাস ধরে গোপনে এই পাহাড়ের সন্ধান করার পর তা পেয়ে গেলাম এই রাজ্যেরই চাম্বা জেলায়, যার Wormhole হবার পরিচয় হয়তো আগে কেউ পায়নি। আর এই পাহাড়ের গুহায় ঢোকার ফলই আমাকে এখন ভোগ করতে হচ্ছে!

এবার অমলেন্দু উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
– এই গুহার মধ্যে ঢুকে কোন জগতে প্রবেশ করেছিলেন আপনি? কি ভাবে হল আপনার এই পরিণতি?
আবার কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকার পর শোনা যেতে লাগলো বিনোদ বাবুর কণ্ঠস্বর,
– সেটা বোঝার আগে মনে করতে হবে হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত কাকভুষুণ্ডী নামক এক ঋষির কথা। তিনি বলেছেন যে সময় চক্রাকারে অতিবাহিত হয়। প্রথমে আসে সত্য যুগ, তারপর ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ এবং অবশেষে কলি যুগ। কলি যুগ শেষ হলে আবার সময় পদার্পণ করে সত্য যুগে। একেই বলা হয় “কালচক্র”। কাকভুষুণ্ডীর কালচক্রের বাইরে থাকার ক্ষমতা ছিল, তাই তিনি রামায়ণ এবং মহাভারতকে যথাক্রমে এগারো এবং ষোলো বার ভিন্ন ভাবে ঘটে যেতে দেখেছেন। তবে দক্ষযজ্ঞকে দুবার একই ভাবে ঘটে যেতে দেখে, তিনি আর তৃতীয় বার দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে উঠলো জীবটা,
– আমি ওই পাহাড়ের গুহা থেকে যে জগতে ঢুকতে পেরেছিলাম, তাতে চলছিল দ্বাপর যুগ। সেখানে ঘটে চলেছিলো মহাভারতে বর্ণিত একের পর এক ঘটনা। আমি সেই জগতে এসে পদার্পন করি নিষাদ রাজ্যের জঙ্গলে, যা এখনকার মধ্য প্রদেশে অবস্থিত গোয়ালিওরে। হিমাচল প্রদেশের চাম্বা থেকে মধ্য প্রদেশের গোয়ালিওরে আমার এই যাত্রাটিকে বলা যায় Teleportation এর একটি উদাহরণ, যেখানে কোন বস্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে, এই দুটি জায়গার মধ্যেকার পথ অতিক্রম না করেই!…….সেই সময় মহাভারতে বর্ণিত, নারদ মুনির দ্বারা শাপিত হয়ে কর্কটক নাগ অচলাবস্থায় পড়ে ছিলেন একটি জ্বলন্ত গাছের নিচে। হিসাব মত, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে আগুনের তাপ থেকে রক্ষা করতে চলেছেন রাজা নল। কিন্তু তার আগেই আমি সেখানে পৌঁছে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হবার হাত থেকে বাঁচাই কর্কটককে!

উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠলো শ্রাবন্তী,
– আর এই উপকারের পুরস্কার হিসেবে, রাজা নলকে ছেড়ে, কর্কটক দংশন করলো তোমাকে! তার দংশনের পর রাজা নল যে “বাহুক”-এ পরিণত হয়েছিল, তা হল এখন তোমার পরিণতি, তাই তো? কিন্তু মহাভারত অনুযায়ী, কর্কটক নলকে একটি বস্ত্র দিয়েছিলেন, যেটা শরীরের ওপর রাখলেই তিনি আবার আগের শারীরিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন…..কিন্তু….কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে…….
তার কথা শেষ না হতেই বলে উঠলেন “বাহুক”-রূপী বিনোদবাবু,
– সেখানেই হল হল সমস্যাটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্কটক বুঝতে পারলেন, যে তিনি কত বড় ভুল করে ফেলেছেন, কারণ আমি রাজা নল নই! এদিকে সাময়িক ভাবে প্রাণে বাঁচলেও, তাকে দেওয়া নারদ মুনির অভিশাপ কিন্তু আমি খণ্ডন করতে পারবো না, পারবেন রাজা নল। তাই তাকে আরেকবার রাজা নলকে দংশন করতে হবে, এবং তাকেই দিতে হবে সেই দিব্যবস্ত্র! আমাকে তা দিলে চলবে না!……অনেক ভেবে কর্কটক আমায় বললেন,
“সেই বস্ত্র তোকে আমি না দিতে পারলেও, আমার জাদু বলে এই জগৎ থেকে তোকে তোর নিজের জগতে, তোর নিজের গ্রামে, ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলাম। আর এই কথাও জেনে রাখ, তোকে আবার নিজের রূপে ফিরে আসতে সাহায্য করবে তোর জগতে থাকা আমারই এক বংশধর। তবে মনে রাখিস, তোর জগৎ আর এই জগতের সময়ের গতিবেগ এক নয়। যে স্বল্প সময়ে তুই এই জগতে কাটালি, তাতেই তোর জগতে অতিবাহিত হয়েছে দশ বছর!”
এই বলে তিনিও সেখানে সৃষ্টি করলেন একটি Wormhole, যার সাহায্যে আমি সেখান থেকে আবার এই গ্রামে পদার্পন করলাম, তবে এর মধ্যেই কেটে গেল দশ দশটি বছর!

অধৈর্য হয়ে শ্রাবন্তী বলে উঠলো,
– এতটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু সেই কর্কটকের বংশধর! তার সন্ধান কি ভাবে পাবো আমরা?
সকলের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত করে, এই প্রথম বার বলে উঠলো বলবন্ত,
– মে হি হু বো নাগরাজ কর্কটক কি বংশজ!

(৮)

বলবন্তের চোখদুটি জ্বলজ্বল করে উঠলো। একটি ম্লান হাসি খেলে গেল তার ঠোঁটের পাশে। দৃশ্যমান হল তার গজদাঁত জোড়া, যা তার ফর্সা মুখের সৌন্দর্য্য আরো বৃদ্ধি করেছে। সেখানে উপস্থিত সকল বিহ্বল শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বাংলা হিন্দি মিশিয়ে বলে উঠলো সে (যা আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে সম্পূর্ণ বাংলাতেই দেওয়া হল),
– যে কথা আমি এতদিন কাউকে বলিনি, আজ তা বলার সময় চলে এসেছে। আপনারা হয়তো জানেন না, যে আমি হলাম রাজস্থানের “কারেয়া” (Karewa) প্রজাতির অন্তর্গত জাট (Jatt). শাস্ত্রমতে মনে করা হয়, যে এই প্রজাতির আদি পূর্বপুরুষ হলেন নাগরাজ কর্কটক! সেই জন্যই যুগ যুগ ধরে এই প্রজাতির সকলেই কর্কটকের পুজো করে আসছে। মনে করা হয়, যে এই প্রজাতির কারোর কারোর ওপর নাগরাজের সবচেয়ে বেশি আশীর্বাদ থাকে। তাই সেই সব বংশধরদের শরীরের মধ্যে সৃষ্টি হয় এমন এক বিষ, যা ছিল স্বয়ং কর্কটকের শরীরে!

উত্তেজিত হয়ে শ্রাবন্তী বলে উঠলো,
– আর আপনিও হলেন তেমনই এক কর্কটকের বংশধর! তাই তো?
বলবন্ত বলে উঠলো,
– হ্যাঁ, শ্রাবন্তী দেবী। ছোটবেলা থেকেই মাঝে মাঝে নিজের শরীরে এক অদ্ভুত অস্থিরতা উপলব্ধি করতাম আমি। যখন আমাদের শরীরে জাগে বিবমিষা, তখন যেমন আমরা শরীরের মধ্যে উপস্থিত সকল অপাচ্য পদার্থ বাইরে বার না করা অবধি শান্তি পাই না, এই অস্বস্তিও তেমন। ক্রমে বুঝতে পারলাম যে এর উৎস হল আমার দুই গজদন্তের নিচে! একটি পাত্র দিয়ে দুই দাঁতের নিচে চাপ দিতেই সেখান থেকে গড়িয়ে পড়ল বেশ কিছুটা গাঢ় তরল পদার্থ, যা মোটেই রক্ত নয়। সেদিন থেকেই বুঝতে পারলাম যে ঠিক যেভাবে সাপেদের দাঁতের নিচে বিষ উৎপন্ন হয়, আমার শরীরেও এই একই ঘটনা ঘটছে……বিষ!…..নাগরাজ কর্কটকের বিষ!

একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো বলবন্ত,
– তখন মনে হত, যে এটা নাগরাজের আশীর্বাদ না…..অভিশাপ! কিন্তু আজ আপনাদের সাহায্য করতে পারবো জেনে, আমার ধারণা পাল্টেছে! কারণ আপনারা তো জানেনই যে আমি গবেষণা করি টক্সিকোলজি বিভাগে, আর সকলের অজ্ঞাতে এই বিষ সংগ্রহ করে তার Antidote আমি কিছুদিন আগেই বানাতে সক্ষম হয়েছি! এই কাজ করতে শুরু করেছিলাম নিছকই নিজের কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে, কখনো ভাবিওনি যে তা এই ভাবে আপনাদের কাজে লাগবে। এই Antidote বিনোদ বাবুর শরীরে প্রবেশ করালেই তিনি আবার ফিরে পাবেন তার আগেকার চেহারা!
বিস্মিত চোখে সেখানে উপস্থিত সকলে চেয়ে রইল বলবন্তের দিকে। সকলের অলক্ষ্যে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল “বাহুক”-এর রক্তের মত লাল দুই চোখ থেকে!

পরদিনই বলবন্ত কলকাতায় গিয়ে চন্দ্রপুরে নিয়ে এলো সেই Antidote! “বাহুক” রূপী বিনোদবাবুর শরীরের রক্তে তা ইনজেক্ট করার সাথে সাথে সেই কদর্য খর্বাকার নীলচে কালো রঙের প্রাণীদেহটি যেন কোন জাদুবলে পরিবর্তিত হল একটি দীর্ঘকায় গৌরবর্ণ সুপুরুষ শরীরে, যা বিনোদ বাবুর আসল রূপ!

মা দুর্গার বোধনকালে, প্রতিমার সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে ছিলো বাড়ির সকলে: শ্রাবন্তী, অমলেন্দু, বিনোদ বাবু, বলবন্ত এবং রমাপদ। এছাড়াও দশ বছর ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই চাটুজ্যে বাড়ির শারদোৎসব দেখতে সেখানে দূর প্রান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছে এই গ্রামের অসংখ্য মানুষজন। শ্রাবন্তীর যেন মনে হল দুর্গা প্রতিমার মুখে খেলে গেল প্রশান্ত হাসি, তার মানে সত্যিই তার মনোবাসনা পূর্ণ করলেন স্বয়ং দুর্গতিনাশিনী! ওদিকে ধুপ ধুনোর গন্ধের মাঝে ভরে উঠেছে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ,
“যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।”

(সমাপ্ত – গল্পটিতে উল্লিখিত সমস্ত বৈজ্ঞানিক এবং পৌরাণিক তথ্য বাস্তবের সাথে যথাসম্ভব অপরিবর্তিত রাখার চেষ্টা করেছি, তবে তার সাথে মিশেছে আমার অতিকিঞ্চিত কল্পনা।)

Loading

8 thoughts on “কালচক্র

    1. আলাপীমন সমৃদ্ধ আপনার লেখনীতে।

  1. অসম্ভব রকমের ভালো । ভীষন ভালো লাগলো।

  2. গল্পের মধ্যে একটি ভিন্ন স্বাদের রস পেলাম, অপূর্ব।

Leave A Comment